দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বের পর সুদানের গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছে যেসব দেশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০১
দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বের পর সুদানের গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছে যেসব দেশ

সুদানে শাসন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই করছে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী ‘র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)’। উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির কাছে থেকে সহায়তা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে।

সংঘাতের শুরু থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সুদানে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু সে আহ্বান কার্যকর হয়নি। দেশটির গৃহযুদ্ধে ভেতরে ও বাইরের কারা জড়িত তা নিয়ে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এখানে সেটি তুলে ধরা হলো।

ভেতরে যারা জড়িত
সুদানের সেনবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করা আরএসএফের প্রধানের দায়িত্বে আছেন মোহাম্মদ হামদান দাগলো।

২০১৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির সরকারের পতন হয়। এরপর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২১ সালে এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন বুরহান ও দাগলো। সে সময় সুদানের সেনাবাহিনীতে বুরহানের সহকারী ছিলেন দাগলো। পরে তাদের মধ্যেও বিরোধ তৈরি হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে দুই পক্ষের সশস্ত্র সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় ভয়াবহ সংঘর্ষ।

সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। ছবি: এএফপি

সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। ছবি: এএফপি

এই গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। যা দেশটিকে মারাত্মক মানবিক সংকটে নিমজ্জিত করেছে।

আরএসএফের উৎপত্তি জানজাওয়িদ মিলিশিয়া থেকে। ২০০৩ সালে পশ্চিমাঞ্চলের দারফুরে হওয়া সংঘাতে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত তারা। বর্তমান সেনাবাহিনী লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর পোর্ট সুদান থেকে দেশ পরিচালনা করছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন কামিল ইদ্রিস নামে জাতিসংঘের এক সাবেক কর্মকর্তা। অন্যদিকে, আরএসএফ দারফুরের নিয়ালা শহরে বিকল্প প্রশাসন গড়ে তুলেছে।

বাইরের যারা জড়িত
মিশর: সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান সমর্থক দেশ হলো মিশর। বুরহানকে বৈধ শাসক হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে। আরএসএফ বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে, মিশর বুরহানের সেনাদের সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। তবে কায়রো এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এল-ফাশের শহরের বাসিন্দারা ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রাণ গেছে কয়েক হাজার মানুষের।

এল-ফাশের শহরের বাসিন্দারা ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রাণ গেছে কয়েক হাজার মানুষের।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: সুদানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ আমিরাত আরএসএফকে অস্ত্র ও ভাড়াটে সেনা (অনেকে কলম্বিয়ান) দিয়ে সহায়তা করছে। তারা চাদ, লিবিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়া হয়ে স্থল বা আকাশপথে সুদানে প্রবেশ করছে। এ কারণে সেনা-সমর্থিত সরকার চলতি বছরের মে মাসে আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আমিরাত সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও স্বাধীনভাবে হওয়া কিছু তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

লিবিয়া: আরএসএফকে সহযোগিতা করছেন দেশটির নেতা খলিফা হাফতার। এমন অভিযোগ তুলে গত জুনে সুদানের সেনাবাহিনী বলে, লিবিয়ার সমর্থনের কারণেই সীমান্তবর্তী এলাকায় সশস্ত্র সংগঠনটি একটি অভিযানে সফল হয়েছে। আমিরাতের কাছে থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি নিয়ে তা আরএসএফের কাছে সরবরাহ করেছেন হাফতার। লিবিয়ার এই নেতা অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।

চাদ-তুরস্ক: সুদানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, চাদের প্রেসিডেন্ট মাহামাত ইদ্রিস দেবে’র সরকার আমিরাতের হয়ে আরএসএফের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে আমিরাতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ক শুরু থেকেই সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষে। ওয়াশিংটন পোস্টসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মাধ্যম জানিয়েছে, তুরস্ক আরএসএফের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলার জন্য ড্রোনও সরবরাহ করেছে।

ইরান-রাশিয়া: দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে খার্তুম (সুদানের রাজধানী) ও তেহরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়। এরপর থেকে আরএসএফ অভিযোগ করছে, ইরান সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন সরবরাহ করছে।

এল-ফাশের থেকে বাস্তুচ্যুতরা। ছবি: এএফপি

এল-ফাশের থেকে বাস্তুচ্যুতরা। ছবি: এএফপি

সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের তিন দশকের শাসনামলে দেশটি সামরিকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ২০২০ সালে প্রকাশ্যে আসে যে, লোহিত সাগরে একটি রুশ নৌঘাঁটি স্থাপনের চুক্তি নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। পরের বছর সুদানের সামরিক কর্মকর্তারাও চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে থাকার কথা জানান। সম্প্রতি চুক্তিটি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। রাশিয়া-সুদান সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।

কেনিয়া: আরএসএফকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার অভিযোগ আছে কেনিয়ার বিরুদ্ধে। গত জুনে এই অভিযোগ তোলে সেনা সমর্থিত সরকার। তারা দাবি করে, খার্তুমে আরএসএফের একটি অস্ত্রাগারে ‘মেড ইন কেনিয়া’ লেখা অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ তোলা হয়েছে, নাইরোবি (কেনিয়ার রাজধানী) চাদ হয়ে আমিরাতের সরবরাহ করা সামরিক সরঞ্জামের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি সুদানে বিভাজন উসকে দিচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে কেনিয়ায় আরএসএফের রাজনৈতিক শাখা প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সভাও অনুষ্ঠিত হয়।