মোনথা এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড় যাচ্ছে অন্ধ্রের দিকে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোনথা আরও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক মঙ্গলবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘূর্ণিঝড় প্রবল আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশের ওপর এর তেমন প্রভাব পড়বে না। ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে উঠে এলে এর আংশিক প্রভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অল্প বৃষ্টিপাত হতে পারে।”
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোনথা।
সে সময় প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
মোনথার প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। সে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
বৃহস্পতি, শুক্র ও শবিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এই সময়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে।
গত ২৪ অক্টোবর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর ধাপে ধাপে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে সেই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র রোববার রাত ৩টায় ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়।
সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী তখন সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় ‘মোনথা’। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম, যার অর্থ সুন্দর বা সুবাসিত ফুল।
সোমবার রাতে মোনথা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় এ ঝড় ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল।
এ প্রবল ঘূর্ণিঝড় আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে মছলিপত্তম ও কলিঙ্গপত্তমের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজার জানিয়েছে, ঝড় এগিয়ে আসায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিশাখাপত্তম, পূর্ব গোদাবরী, পশ্চিম গোদাবরী, কোনাসীমা জেলার নিচু এলাকাগুলি থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ওড়িশা, তেলঙ্গানা এবং তামিলনাড়ুর প্রশাসন। অন্ধ্র প্রদেশের বিজয়ওয়াড়া, রাজামুন্দ্রে, কাকিনাড়া, বিশাখাপত্তম এবং ভীমবরম হয়ে চলাচল করা অন্তত ৬৫টি ট্রেন মঙ্গল এবং বুধবারের জন্য বাতিল করা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। উপকূলের পুরো এলাকায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিশাখাপত্তম বিমানবন্দর থেকে ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্যোগের আশঙ্কায় ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রাখা হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে।
সাগরে কোনো ঘূর্ণিবায়ুর চক্র তৈরি হলে এবং এর কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটারের বেশি হলে তখন তাকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শক্তির বিচারে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি মাত্রায় ভাগ করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
• বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার হলে তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়।
• বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়।
• বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১৮-২১৯ কিলোমিটার হলে তাকে ‘হারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়।
• বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়।
সর্বশেষ চলতি সমাসের শুরুতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। সে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।


আপনার মতামত লিখুন