লিজ বাতিল, সোনাদিয়ায় ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ফিরে পেল বন বিভাগ

কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) লিজ বাতিল করে ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি পুনরায় ফিরে পেয়েছে বন বিভাগ।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি-২ শাখার উপসচিব মাসুদ কামাল গত ৫ মে এ সংক্রান্ত এক স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এতে জানানো হয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৬ সালে যেসব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর লিজ এখন বাতিল করা হয়েছে। বাতিলকৃত জমিগুলোর মধ্যে রয়েছে মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া মৌজার ২,৭১২ একর, প্রস্তাবিত সমুদ্র বিলাস মৌজার ৪,৮৩৯ একর এবং চর মকবুল মৌজার ১,৯১৮ একর।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে জমিগুলো ইকোপার্ক স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও বাস্তবে সেখানে গাছ কাটা, চিংড়িঘের নির্মাণসহ পরিবেশবিনাশী নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যা দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দ্বীপটির পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ দখলদ উচ্ছেদ, খালের বাঁধ অপসারণ করে জোয়ারের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, বালিয়াড়ি পুনরুদ্ধার এবং ম্যানগ্রোভ ও অন্যান্য পরিবেশবান্ধব গাছের চারা রোপণ।
স্মারকে উপসচিব মাসুদ কামাল বলেন, “এই জমিগুলোতে কেওড়া, কেয়া, নিশিন্দা, নারকেল ও তালগাছের মতো স্থানীয় উপযোগী প্রজাতির চারা রোপণ করা হবে। পাশাপাশি দ্বীপ সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।”
এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে বেজাকে জমি হস্তান্তর করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বেজা তখন দেশের বৃহত্তম ইকো-ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনায় ভারতের মাহিন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির দায়িত্ব দেয়।
তবে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আদালতে রিট করলে হাইকোর্ট জমির বরাদ্দ স্থগিত করে। এরপর দীর্ঘ আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার পর এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জমির লিজ বাতিল হলো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোনাদিয়া দ্বীপকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় দ্বীপটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন