প্রাণে বাঁচতে বিদ্যালয় ছাড়লেন প্রধান শিক্ষক
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে তাঁর কক্ষে পাথর ছুড়েছে কথিত প্রাক্তন-বর্তমান কিছু শিক্ষার্থী। প্রাণরক্ষায় পালিয়ে বাঁচেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে মাদামবিবিরহাট শাহজাহান (র.) উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা প্রধান শিক্ষক এ বি এম গোলাম নুরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেন।
এ ছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের স্লোগানে সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে ছবি থাকার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানায়, ওই বিদ্যালয়ের গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফ আলী আরমানের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষার্থী মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয়। তারা প্রধান শিক্ষক এ বি এম গোলাম নুরের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। তাঁর কক্ষে গিয়ে শুরুতে মব সৃষ্টি এবং পরে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে নানা স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক মোটরসাইকেলে করে দ্রুত বিদ্যালয় ছেড়ে যান। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেয়। খবর পেয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সোহেল রানার নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে আসে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া সাইফ আলী আরমান গত বছর বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বর্তমানে সে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আছে। তার নেতৃত্বেই শতাধিক শিক্ষার্থী মঙ্গলবারের ঘটনা ঘটায়।
বুধবার বক্তব্য জানতে সাইফ আলী আরমানের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে সে নিজেকে ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক দাবি করে বলে, ‘সবাই আমাকে মানে বলেই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি। আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে প্রতিবেশী এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে। অষ্টম শ্রেণির প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রিসানকে দুই সপ্তাহ আগে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন প্রধান শিক্ষক।’ ওই শিক্ষককে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে সে দাবি করে, তাঁর সঙ্গে পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ছবিও রয়েছে।
ফরিদা ইয়াছমিন ও শারমিন আক্তার নামের দুই অভিভাবক বুধবার বলেন, মানুষের দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে। প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা পাথর ছুড়ে মারছে, বিষয়টি দেখে খুব খারাপ লেগেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এভাবে মব সৃষ্টি করে পদত্যাগে বাধ্য করার কোনো মানে নেই।
প্রধান শিক্ষক এ বি এম গোলাম নুর বলেন, ‘সাইফ আলী আরমান বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার দুপুরে সে বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসরুম থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে মাঠে নিয়ে আসে। এ সময় মব সৃষ্টি করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় দ্রুত অফিস থেকে বের হতে বাধ্য হই।’ প্রাণরক্ষা পাওয়ায় তিনি আল্লাহর দরবারে শোকরিয়াও আদায় করেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিনের ভাষ্য, মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা অভিযোগও দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষে থেকে প্রধান শিক্ষককে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মব থেকে প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানার ভাষ্য, শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে করে আন্দোলন করেছে শুনে তারা যান। এ সময় অফিসে থাকা প্রধান শিক্ষক দ্রুত সরে যান। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুলিশের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইসমত আরা বেগম বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনার পর বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, একটি পক্ষ তাঁকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এখানে নিয়মবহির্ভূত কিছু করার সুযোগ নেই জানিয়ে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘কাউকে পছন্দ না হলে পদত্যাগে বাধ্য করা আইনসিদ্ধ নয়।’


আপনার মতামত লিখুন