কক্সবাজারে উচ্ছেদ অভিযানে বাধার ঘটনায় আরও এক মামলা, আসামি ১০০০
 
                                                                    রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় বলে জানান, কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান।
তিনি জানান, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন (৪৩)। এ ছাড়া মামলায় রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকেও আসামি করা হয়েছে।
ইলিয়াস খান আরও জানান, বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের পঞ্চম দিন শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নুনিয়ারছড়া ও নতুন বাহারছড়ার অংশে কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল বিআইডব্লিউটিএসহ প্রশাসনের। এর জন্য বুলডোজার নিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার চেষ্টাও করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা এগিয়ে গেলেও যেতে পারেননি বেশি দূর।
এর আগেই সকালে শহরের প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে নেমে আসে শত শত স্থানীয় জনতা। শুরু করে বিক্ষোভ, ৪ রাস্তার মোড়ে দেয়া হয় ব্যারিকেড, জ্বালিয়ে দেয়া হয় টায়ার। গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে ঠেলাগাড়ি ফেলে তৈরি করা হয় প্রতিবন্ধকতা। এ সময় বুলডোজার ভাঙচুরের পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযানে থাকা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কর্মীদের বাধাদান ও হামলার চেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় রোববার দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ এজাহারটি নথিভুক্ত করেছে।’
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং উচ্ছেদ অভিযানে বাধাদানের ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।
পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিন প্রতিবন্ধকতায় কার্যক্রম পণ্ড হলেও এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটারের বাঁকখালী নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই ছয় কিলোমিটারে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ভূমি অফিস এবং বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের পৃথক তালিকা তৈরি করেছে। সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার থাকলেও দুই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রভাবশালী।
বিআইডব্লিউটিএ ’র সূত্র মতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদী তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা ছিল। জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা তা দেয়নি। ফলে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় দখল অব্যাহত ছিল।
যার সূত্র ধরে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এর মধ্যে বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগস্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মামলার রায়ে বলা হয়, কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যার সূত্র ধরে গত ৩০ আগস্ট কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক বাঁকখালী নদী দূষণ ও দখলমুক্তকরণের লক্ষ্যে বিশেষ সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভা শেষে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
এ সময় তিনি কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখলদারদের সমন্বিত তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন।
যার সূত্র ধরেই গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। প্রথম দুদিনে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অন্তত ৫৬ একর নদীর জমি উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ


 
                                             
                                             
                                             
                                            
আপনার মতামত লিখুন