বাবুগঞ্জের ঘটনায় এক দিনেই বিএনপির ১০ লাখ ভোট কমে গেছে: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের দলের একাংশের আচরণের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার ভোট কমছে। গতকালের বাবুগঞ্জের ঘটনায় এক দিনেই ১০ লাখ ভোট কমে গেছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।’
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ‘বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ সেতু উদ্বোধন পরবর্তী হেনস্তা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে’ বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এই কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, বরিশালের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দাবি নিয়ে ৬-৭ জন উপদেষ্টার কাছে স্মরকলিপি দিয়েছিলাম। এর ফলশ্রুতিতে কিছু কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। ছয় লেন রাস্তা ও মীরগঞ্জ সেতু এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। অনেকেই এটা নিয়ে কাজ করেছে। সরকার আসার পর এই প্রকল্পগুলো রিজেক্ট করে দিয়েছে। আমরা আন্দোলন ও প্রেশার ক্রিয়েট করে উপদেষ্টাদের সঙ্গে তদবির করে এই প্রকল্পগুলোকে রেগুলার করেছি। তার ফলশ্রুতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে বাজেট দিয়ে সরকার মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি চায়না কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়ে গেছে। এখন কাজ শুরু করতে আর সমস্যা নেই।
তিনি আরও বলেন, সেই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে আমরা সেতু নিয়ে কথা বলেছি। আমরা ইতোমধ্যে জানি যে কোম্পানিটি টেন্ডার পেয়েছে তাকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে এপ্রোজ করা হয়েছে। ইট, সুরকি, বালু-পাথর, শ্রমিক সাপ্লাই কাজগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে যোগাযোগের যে ভাষা ছিল; তাতে চীনা কোম্পানি মোটেই সন্তুষ্ট হয়নি। কোম্পানির লোকেরা বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে বসতে চেয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের ব্যাপার। এজন্য আমি তাদের সঙ্গে বসতে রাজি হইনি।
ফুয়াদ বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আমি কথা বলেছি। একটা কাজ যদি মাঠে আসার আগেই কোম্পানিগুলোকে এপ্রোজ করা হয় তাদেরকে যদি বলা হয় ইট-বালু, সুরকি তাদের কাছ থেকে নিতে হয় এটা যে কোনো বিদেশি কোম্পানির জন্য পীড়াদায়ক, তারা নিরাপত্তা সংকটে ভোগে। আমি সেই কথাগুলোই বলেছি। আমি কোনো দল বা ব্যক্তি, কাউকে মেনশন করিনি। তার পরও আমি ফিরে আসার পরে আমাকে রীতিমত ঘুষি মারার চেষ্টা করা হয়েছে। যা আমার সহকর্মীদের গায়ে লেগেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কারোর নাম বলা হয়নি, কোনো দলকে মেনশন করা হয়নি আমি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি উন্নয়ন কাজের সহযোগিতা চাইলাম এলাকাবাসীর কাছে। সেটাকে কেন্দ্র করে যে হেনস্তা ক্রিয়েট করা হয়েছে এটা রোববার আপনারা দৃশ্যমান দেখেছেন।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ অভিযোগ করে বলেন, গত দুই মাস ধরে অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছি। আমার ক্যাম্পেইনে নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। থানায় গেলেও মামলা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না। এগুলো আমরা আওয়ামী লীগের আমলে দেখেছি। প্রশাসন ধরেই নিয়েছে যখন; আওয়ামী লীগ থাকবে তখন আমরা আওয়ামী লীগ, আর যখন বিএনপি আসবে বা থাকবে তখন আমরা সেই দলের হয়ে যাবো। একটা রাষ্ট্র এইভাবে হতে পারে না। গত বছরের লড়াইটা ছিল আমরা রাষ্ট্রকে রাষ্ট্র বানাতে চাই। আমরা সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। যে যার জায়গা থেকে কাজ করবে।
তিনি বলেন, যাদের জন্য যে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি সেই এলাকায় বসে রাজনৈতিক পদ পদবি ব্যবহার করা মানুষরা আমাদের সাথে যে আচরণ করছেন তা খুব দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
এ সময় তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া সব ধরনের অংশগ্রহণে নির্বাচন সম্ভব নয়। যেখানে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে কথা বলা হচ্ছে তা কখনই সম্ভব নয়। এটি শুধু বরিশালে আমার সঙ্গে যেটা ঘটেছে, তা নিয়ে যে বলা হচ্ছে তা নয়, সারা দেশেই এমন ঘটনা ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির বরিশাল জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে বরিশাল প্রেসক্লাবে একই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।


আপনার মতামত লিখুন